আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নাম। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবং ১৬২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০ অক্টোবর, ২০২০। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেটির পথ পরিক্রমা শুরু হয়েছে একটি পাঠশালা থেকে।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবহিত প্রাক্তন নাম জগন্নাথ কলেজ, এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে পরিচিত ছিল। এটি ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ ছিল। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। উল্লেখ্য, কিশোরীলাল রায় শিক্ষাবিস্তারে আগ্রহী ছিলেন।
১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত হয়। এসময় এটিই ছিল ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এভাবেই দীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষ করে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায় আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জগতে এক যুগান্তকারী নামে পরিণত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিদিন ৭০০ জন শিক্ষক ও প্রায় বিশ হাজার শিক্ষার্থীর পদভারে মুখরিত থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ।প্রতিটি দিন যেন একটি মিলন মেলা। ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করে নিয়েছে।
শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভুমিকা রাখছে।পুরান ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে এখানে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, সরস্বতী পূজা,বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও প্রভৃতি উৎসব। তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরান ঢাকার মানুষের সাথে রয়েছে আত্মার বাঁধন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সভা সেমিনারে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। চাকরির বাজারে বিসিএস,পুলিশের এস আই, সহকারী জাজ, ব্যাংকসহ অন্যান্য খাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্যও ঈর্ষনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উদ্বোধন করা হবে মেয়েদের জন্য নির্মিত ১৬ তলা বিশিষ্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল।যেখানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। আরেকটি খুশির সংবাদ হলো ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়ন, তথ্য প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণকরণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে কেরানীগঞ্জে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।অর্থাৎ সেখানে ক্যাম্পাস স্থানান্তর করে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষাবান্ধব সকল পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
কাজ শেষ হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হবে বাংলাদেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় বিশ্ববিদ্যালয়।প্রায় ২০০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত নতুন ক্যাম্পাসে একাধিক একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবনসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। থাকবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসনব্যবস্থা, চিকিৎসাকেন্দ্র। ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, মসজিদ, সুইমিং পুল, লেক, উদ্যানসহ বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের অনুষঙ্গ যুক্ত হবে এর সঙ্গে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য শুধু সনদ প্রদান নয়। সৃষ্টি ও জ্ঞানের রাজ্যে অবাধ বিচরণ এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, গবেষণা ও বহুমুখি সৃষ্টিশীলতায় যুক্ত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ।পরিশেষে প্রত্যাশা থাকবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে।এখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে বদ্ধপরিকর থাকবে।এমনকি দেশের গন্ডি উতরে বহির্বিশ্বে সাফল্যের পদচিহ্ন এঁকে দিবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখক:
মোঃ নজরুল ইসলাম নোবু
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
No comments