অস্তিত্বে আছো মিশে প্রিয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষার দিন বিবিএ ফ্যাকাল্টিতে সিট পরেছিল আমার । তাও আবার এগারো তলায় ! ভোরবেলা না খাওয়ার ফলস্বরূপ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছিল । কোনোরকমে উঠে নিজ আসনে বসে বার কয়েক শ্বাস নিলাম । এটাই জবিতে প্রথম পা রাখা । ভেতরে চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল । যেহেতু এই বিল্ডিং দিয়ে জবিতে পদচারণা শুরু সেজন্য মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যদি এখানে ভর্তি হতে পারি তাহলে এই এগারো তলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে দুইবার উঠানামা করবো ।
অদ্ভুত বিষয় হলো ভর্তির জন্য দ্বিতীয় বার যখন জবিতে পা রাখলাম তখন বড় ভাইয়াকে নিচে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি এগারো তলা পর্যন্ত দুবার উঠানামা করি । জানি,বড্ড ছেলেমানুষী কাজ ! তবুও প্রতিটা সিঁড়িতে পা রাখার সময় মনের ভেতর হাজারো নতুন অনুভূতি এসে জড়ো হচ্ছিল । আর মুখে ছিল বিশ্বজয়ের হাসি ।
তৃতীয় বারের মতো জবিতে এসে শুনি মাইগ্রেশনের ফলে সাবজেক্ট চেঞ্জ হয়েছে । বিশ্বাস হচ্ছিল না । ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে গিয়ে শুনি সত্যি সত্যি ফিজিক্সে পড়ার সুযোগ পেয়েছি । আমি নিরবে অফিস-রুম থেকে বের হলাম ভাইয়ার সাথে । করিডোরে পৌঁছেই খুশিতে লাফালাফি, নাচানাচি শুরু করি । ছোটবেলা থেকে ফিজিক্সের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল। সেই ফিজিক্স জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ার আনন্দটুকু ধরে রাখতে পারছিলাম না । কিছুক্ষণ পর ধ্যান ফিরলে দেখি বেশ কিছু উৎসুক মুখ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । আমি মাথা নিচু করে মৃদু হেসে চলে আসলাম ।
চতুর্থ বারের মতো জবিতে পা রাখি সম্পূর্ণ একা । একরাশ নতুন অনুভূতি নিয়ে কিঞ্চিৎ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে । কিন্তু ক্লাসমেটদের সাথে পরিচিত হওয়ার পর অবাক না হয়ে পারি না । কতদ্রুত সবাই আমাকে নিজেদের একজন করে নিলো, আপন করে নিলো ।
জবি আমাকে নতুন এক পরিবার দিয়েছে । যে পরিবার আমার শ্রদ্ধেয় স্যার-মেম, দায়িত্বশীল বড় ভাইয়া, আপু আর আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের নিয়ে । এ পরিবারেও দুঃখ, কষ্ট, সাময়িক মনোমালিন্য আছে । কিন্তু দিনশেষে একজোট হয়ে হাসতে ভুলি না, অপরকে হাসাতে ভুলি না ।
আমি গর্বিত জবি তোমার জন্য । তোমার পরিবারের ক্ষুদ্র একজন সদস্য হতে পেরে আমি চিরকৃতজ্ঞ । তোমার জন্মপূর্তি উপলক্ষে জানাই শুভ্র অভিনন্দন । ক্যাম্পাসে থাকলে তোমায় গুটিকয়েক কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় মুড়িয়ে বা একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়ার লাল আভাতে মিশিয়ে বরণ করে নিতাম । কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না । তবুও তো তুমি আছো, এই অস্তিত্বে মিশে । আর চিরটাকাল থাকবে ।
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে,যুগে যুগে অনিবার।
----(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
প্রাণের জবি, ভালোবাসি তোমায় । মনের কুঠুরিতে হৃদয়ের বন্ধন হয়ে সারাজীবন থাকবে তুমি । জানো তো, আমার জীবনের একটাই উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য । তা হলো নিজের সিগনেচারকে অটোগ্রাফে রূপ দেয়া । আর তার জন্য আমার পাশে থাকবে তুমি । কি,থাকবে তো? "And miles to go before i sleep...." প্লিজ পাশে থেকো !
লেখক:
শিক্ষার্থী,পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
১৫তম আবর্তন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
No comments