বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের নিয়োগ: রিপাবলিকানদের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক কূটকৌশল
অবশেষে গত সোমবার সিনেটে বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের মোট বিচারপতির পদ ৯ টি ।এই বিচারপতিরা নিয়োগ প্রাপ্ত হন আমৃত্যু। সাম্প্রতিক সময়ে অতি উদারপন্থি বিচারপতি রুথ বেইডার্স গিলবার্সের মৃত্যুর পরে ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনের মাত্র আট দিন পূর্বে অতি তড়িঘড়ি করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কট্টর রক্ষণশীল ক্যাথলিক ধর্মপ্রাণ ৪৮ বছর বয়সী অ্যামি কোনি ব্যারেটকে গত সোমবার সিনেটের উচ্চকক্ষের (৫২/৪৮) ভোটাভুটির মাধ্যমে তার নিয়োগ নিশ্চিত করে। ব্যারেটের নিয়োগের ফলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্য রক্ষণশীলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরো জোরদার হলো কারণ বর্তমান বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন অতি রক্ষণশীল বাকি তিনজন উদারপন্থীদের।ট্রাম্প ব্যারেটের শপথগ্রহণের দিনকে স্মরণীয় দিন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন হোয়াইট হাউজের সামনে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
এবার নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ধোঁয়াশা মূলক বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে এটি পরিষ্কার যে তিনি অত সহজে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন না। তিনি ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন যে, ডেমোক্রেটরা এবার বিপুল পরিমাণ ভোট কারচুপি করবে। এই কারণে আগামী ৩ নভেম্বরের নির্বাচন সম্পর্কিত আইনি লড়াই আদালতে গড়াবে এমনটি ভাবা হচ্ছে। এই কারণে ট্রাম্প প্রশাসন তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের মাত্র আট দিন পূর্বে তাদের মনপুষ্ট একজন বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দিয়েছে। যদিও বিচারকরা নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে স্বাধীন এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিন্তু সত্য কথা বলতে তারাও রাজনৈতিক মদদপুষ্টের উর্ধে নয়।
যদি সর্বশেষ একটি মামলা বিবেচনা করা হয় :
উইসকনসিন রাজ্যের একটি মামলায় সর্বোচ্চ আদালত বলেছে যে, ৩ তারিখের পূর্বে ডাকযোগে যে সকল ভোট যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এসে পৌঁছাবে শুধুমাত্র সেগুলোকে নির্বাচনের জন্য বৈধ ভোট হিসাবে গণনা করা হবে কিন্তু ডেমোক্রেটরা দাবি করেছিল ৩ নভেম্বরের পরেও পাঁচ-ছয় দিন পর্যন্ত ডাকযোগে প্রাপ্ত ভোট নির্বাচনের বৈধ ভোট হিসেবে গণ্য করার জন্য। কারণ কোভিড-১৯ এবং ডাক বিভাগে অব্যাহত শ্লথগতির কারণে এবার ডাক যোগে ভোট বিলম্বে হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত সেটাকে খারিজ করে দেয়। আর এই মামলার রায় প্রদানে প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচজন রক্ষণশীল বিচারপতি এটাকে বাতিলের পক্ষে রায় দেন বাকি তিনজন উদারপন্থি বিচারপতি এটার বিরোধিতা করে আর এখন রক্ষণশীল বিচারপতিদের তালিকায় আরো একজনের নাম যুক্ত হলো। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ৩০ লক্ষ ভোট কম পাওয়ার পরেও উইসকনসিন ,পেনসিলভেনিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের নির্বাচনী কলেজের ভোট লাভ করার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের ভোট গণনা এবং পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন মামলা ঝুলে আছে যেগুলো সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
এখন যদি আগামী ৩ তারিখের নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো আইনি লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়ায় তাহলে সেখানে রিপাবলিকানদের প্রাধান্য বিস্তার করবে এটি বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না। এরপর স্বভাবতই সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান অনুসার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদকে আদেশ প্রদান করবেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রতিটি রাজ্য শুধুমাত্র একটি করে ভোট দেয়ার ক্ষমতা প্রদত্ত হবেন। যেহেতু বর্তমান প্রতিনিধি পরিষদে এবং সিনেটে রিপাবলিকানদের প্রাধান্য বিস্তার এবং অধিকাংশ রাজ্যগুলোর গভর্নর রিপাবলিকানদের হওয়াতে এখনো পর্যন্ত জনমত জরিপে জানা গেছে যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষমতা প্রতিনিধি পরিষদের হাতে বর্তায় তাহলে রিপাবলিকানরা ৫০ টি রাজ্যের মধ্যে ২৭ টি রাজ্যের ভোট লাভ করবে। বাকি ২৩ টি রাজ্যের ভোট ডেমোক্রাটদের পকেটে যাবে যার অর্থ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে রিপাবলিকান প্রার্থী। কেল্লাফতে।
বিরোধীদের তীব্র বিরোধিতার পরেও বিচারপতি ব্যারেটের নিয়োগ ট্রাম্পকে যেমন স্বস্তি এনে দিয়েছে তেমনি পুনর্নির্বাচনের ভয়ে থাকা রিপাবলিকান সিনেটরদের জন্যও স্বস্তি এনে দিয়েছে। রক্ষণশীলদের কাছে হোয়াইট হাউজের চেয়েও সিনেটে নিয়ন্ত্রণ রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যে সকল রিপাবলিকান সিনেটর ভোটের লড়াইয়ে প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা আশা করছেন ব্যারেটের নিয়োগের পুরস্কার হিসেবে তারা সহজেই ভোটের বৈতরণী পার হতে পারবেন।
তাছাড়া অন্য একটি বিষয় মাথায় নিতে হবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণের নিয়োগ আমৃত্যু। এখনো পর্যন্ত ট্রাম্প রেকর্ড তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এই তিনজন সহ মোট ছয় জন বিচারপতি রক্ষণশীল যারা স্বভাবতই সকলে রিপাবলিকান দলের মদদপুষ্ট বলে এখনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ অ্যামি কোনি ব্যারেট একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক এবং গর্ভপাত আইনেই ঘোর বিরোধী যেটা রিপাবলিকান দলের প্রধান বৈশিষ্ট্যের একটি। সুতরাং বলা যায় যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে রিপাবলিকানদের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হলো । আর এ অবস্থা আগামী ২০ বছর বজায় থাকবে আশা করা যায় যেটা ডেমোক্রাটদের জন্য বড় একটি মাথা ব্যথার কারণ।
এখন যে অবস্থা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ যেকোনো বিষয়ে রিপাবলিকান দল কে সাহায্য করবে এতে কোন সন্দেহ নেই যেটা ঘটেছিল ২০০০ সালের নির্বাচনে, ভোট গণনা সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পূর্বেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সমর্থনে রিপাবলিকান পদপ্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়েছিল।এটি যে আবার ঘটবে না সেটা বলার কোন কারণ নেই। সুতরাং নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের নিয়োগ নিঃসন্দেহে রিপাবলিকানদের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক কূটকৌশলের পরিচয়।
লেখক:
মুছা কালিমুল্লা
শিক্ষার্থী,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
No comments