শখ বা আত্নকর্মসংস্থানে ছাত্রজীবনে ফটোগ্রাফি
প্রতিটি মানুষের জীবনে পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোর মধ্যে ছাত্র জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যাকে বলা হয় বীজ বপনের সময় বা "Seed time of life". এই সময় মানুষ সবচেয়ে বেশী নতুনত্বের সাথে নিজেকে জড়ায়।জানার ও বোঝার পরিধিকে বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা চালায়। ছাত্রজীবনের একটি পর্যায়ে এসে মোটামুটি অনেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য থেকে ছোট-খাটো কাজে মনোনিবেশ করে। বিশেষত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে কোন না কোন কাজের সাথে সংযুক্ত থাকে। সেটা অনেকে করে পারিবারিক অক্ষমতার দরূণ টিকে থাকার প্রয়াসে কেউবা শুধুই শখের বসে।
শখ বা নেশার বসে সংযুক্ত হওয়া কাজ একসময় অনেকের পেশায় পরিণত হয়। একটু বড় মাত্রার উদাহরণ হিসাবে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গে নাম বলা যায়। বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগ কে সহজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ও তাঁর বন্ধুরা ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। আয় -রোজগার নয় এটি ছিল তাঁর শুধুই শখ। পরবর্তীতে এই সামান্য কাজই তাঁদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অাজ বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি লোক ফেসবুক ব্যবহার করে নিজেদের দৈনন্দিন কাজে।
জুকারবার্গের মতো এমন অনেক উদীয়মান প্রতিভাবান'রা লুকিয়ে আছে আমাদের মাঝে। যখন সহপাঠীরা কেউ খুঁজে পার্ট-টাইম জব বা টিউশন, তখন তাঁরা হাতে তুলে নেয় ক্রিকেট ব্যাট, গিটার বা ক্যামেরা। কারো অধিনস্ত থাকতে তাঁরা নারাজ। নিজের মতো সৃজনশীলতা দিয়ে তাঁরা বিশ্বজয় করার স্বপ্ন দেখে যায় অবিরাম। সেই সৃজনশীল বা আত্ন-নির্ভরশীল কর্মকান্ড গুলোর মধ্যে ফটোগ্রাফি উপরের সাড়িতে। বর্তমান সময়ের পরিক্রমায় এটি সময়োপযোগী এক "সেল্ফ এমপ্লয়মেন্ট "।
সংরক্ষণ বা শেয়ারিং প্রবণতার উপর ভিত্তি করেই ফটোগ্রাফি পেশার জন্ম। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানারকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাই স্বভাবতই বৃদ্ধি পেয়েছে ফটোগ্রাফি পেশার পরিসর। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন মানুষ এখন এক ক্লিকে সংরক্ষণ করে রাখতে মরিয়া। হোক সেটা বিয়ে, জন্মদিন, বিশেষ কোন অনুষ্ঠান, বন্ধুদের সাথে আড্ডা বা হ্যাং-অাউট সবকিছুতে একটুখানি ছবি তোলা যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। সেই সূত্র ধরে পেশা হিসাবে ফটোগ্রাফি পৌঁছে গেছে এক অসীম উচ্চতায়। রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফটোগ্রাফির উপর উচ্চশিক্ষা লাভের সুব্যবস্থা। ফলে সময়ের প্রয়োজনে তৈরী হচ্ছে পেশাদার ফটোগ্রাাফার।
একজন সৃজনশীল এবং দক্ষ ফটোগ্রাফারের কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপ্তি অনেক বেশি। ফটো সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে বর্তমানে সুপরিচিত এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেকেই। একজন ফটো সাংবাদিকের প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেট্রনিক মিডিয়া, নিউজ এজেন্সি, ফটো এজেন্সিতে কাজের সুযোগ আছে। সাংবাদিকতা ছাড়াও গ্ল্যামার ফটোগ্রাফি, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, চলচিত্রে স্টিল ফটোগ্রাফি করার সুযোগ রয়েছে। ফটো কম্পিটিশন এবং ফটো এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া মহল্লা বা পাড়ায় স্টুডিও স্থাপন করেও প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় এই পেশায়।
দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে হলে সৃজনশীল মনোভাব থাকতে হবে। একটি দৃশ্য থেকে সাধারণ মানুষ যা না দেখে একজন ফটোগ্রাফারকে তার সৃজনশীলতার মাধ্যমে ওই দৃশ্য থেকে আলাদা কিছু বের করে আনার যোগ্যতা থাকতে হবে। এ পেশায় ধৈর্য থাকাটা জরুরি। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো একজন ফটোগ্রাফার এর মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা।
ফটোগ্রাফি পেশা সম্পর্কে তুলনামূলক অনেক কিছুই উপস্থাপন করলাম। এবার পরিচিত হওয়া যাক ছাত্রবস্থায় নিজের প্রতিভাকে তুলে ধরা একজন তরূণ পেশাদার ফটোগ্রাফার এর সঙ্গে:
রক্তিম ইউসুফ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম ব্যাচ আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। এস. এস.সি ও সমমানের পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করায় মা-বাবা কিনে দেন ক্যামেরা। শুরুতে বেশ হৈ হুল্লুর বা ঘুরেফিরে ছবি তোলা চলতে থাকে। তবে সেটা ছিলো শুধুই তোলা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শেয়ার করা অব্দি সীমাবদ্ধ। নিজের অজান্তেই মাথায় চেপে বসে পেশাদার ফটোগ্রাফার হবার ইতিবাচক ভূত। পরিচিত অনেকের কাছ থেকেই শিখতে থাকেন নানান কৌশল।
ছোট খাটো অনুষ্ঠানে সুনিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়াময় ফটোগ্রাফি অনেকের নজর কাড়ে। ফলে, স্বপ্নকে নেন অারেক ধাপ এগিয়ে। কিনেন ফেলেন ফুল ফটোগ্রাফি সেট। পেয়ে যান সাফল্য। তৈরী করেন নিজের প্রতিষ্ঠান "RAREBIRD Photography "। মূল টার্গেট বিয়ের ফটো শুট করা তবে যেকোন ধরনের অনুষ্ঠানে অামন্ত্রণ জানালে পেয়ে যাবেন তাঁর শৈল্পিক হাতের পরিপূর্ণ ছবিতে নিজেকে মেলা ধরার সুযোগ। ছবি তোলার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ। মোটামুটি ৩,০০০/- টাকা ২৬,০০০টাকা অব্দি যার পরিধি বিস্তৃত। ফটোগ্রাফির ভাষানুযায়ী যেগুলোর সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে অভিনব সব নাম। যেমন; EXCLUSIVE SHOOT -3000, CLASSIC EVENT -6500, SILVER BAY-8500, GOLDEN SEA -12000,FANCY DIAMOND -26000
এবারে কথা বলা হলে রক্তিম জানান, ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করা এবং সেটাকে জীবনযাত্রায় প্রয়োজন মেটানোর উপকরণ হিসাবে ব্যবহারের তাগিদেই আমার ফটোগ্রাফিকে নিয়ে ভিন্ন মাত্রার যাত্রা শুরু। সামনে সুযোগ পেলে নিজের সর্বোচ্চটা তুলে ধরতে চান ফটোগ্রাফি পেশার জন্য। এমনকি তিনি ফটো সাংবাদিক হিসাবে কাজ করার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন বলেও জানান। সবার কাছে তিনি প্রত্যাশা করেন দোয়া এবং অফুরত্ন ভালোবাসা। ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত যেকোন কাজে তিনি যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
আমাদের তরফ থেকেও শুভকামনা ও ভালোবাসা থাকবে তাঁর অনাগত ভবিষ্যতের জন্য। যেন বাংলাদেশের তরূণরা তাঁর মতো সৃজনশীলতা বা প্রতিভাকে প্রথাগত সামাজিক ব্যবস্থায় অাটকে ধ্বংস না করেন। মেলে ধরেন নিজস্বতা বৈচিত্র্যময়তা। যেন বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে পারে নিজেকে তথা লাল-সবুজের পতাকাকে। সময়ের প্রয়োজনেই সৃষ্টি হোক শত শত "মি স্পেশালিষ্ট "এটাই কামনা।
লেখক:
অনন্য প্রতীক রাউত
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
No comments